বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

শয্যা সংখ্যা বাড়ালেই চলবে না বাড়াতে হবে চিকিৎসাসেবাও।


          ♥ ♥♥♥ মোঃআবুল কালাম আজাদ। ♥♥♥♥♥

★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★
 স্বাস্থ্য অধিদফতর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ
(চমেক) হাসপাতালে আরো ৫০০ শয্যা বাড়ানোর
সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সংবাদ চট্টগ্রামে বসবাসরত
নাগরিকদের জন্য বড় সুসংবাদ। গতকাল দৈনিক
আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
‘বর্তমান অবকাঠামো উন্নয়ন ও বর্ধিতকরণের
মাধ্যমে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধিকরণ’
শীর্ষক এক প্রকল্পের আওতায় শয্যা সংখ্যা
বাড়ানোর এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য
অধিদফতর। চমেক হাসপাতালসহ দেশের পুরাতন মোট
৫টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এ প্রকল্পের
আওতায় রয়েছে। বাকি চারটি হাসপাতালের মধ্যে
রয়েছে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল
কলেজ হাসপাতাল, বরিশালের শেরে বাংলা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং রাজশাহী ও
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এ প্রকল্পের
আওতায় অতিরিক্ত ৫০০ শয্যা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে
হাসপাতালগুলোর কাছে তথ্য–উপাত্ত চেয়ে গত ৮
ফেব্রুয়ারি চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
সরকারের এ প্রয়াসের জন্য সাধুবাদ জানাতেই হয়।
স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে বাংলাদেশের অগ্রগতি আজ
বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত। দেশে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার
হ্রাসসহ সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে
বাংলাদেশের সাফল্য অনেক। তৃণমূল পর্যায়ে
স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ
করেছে সরকার। দেশে আজ আধুনিক মানের
চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে।
টেলিমেডিসিনসহ আরও নতুন নতুন আবিষ্কারের
মাধ্যমে চিকিৎসাবিদ্যায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন
এসেছে। সকল ইতিবাচক পরিবর্তনের সঙ্গে তাল
মিলিয়ে বিশেষায়িত শিক্ষার মাধ্যমে
বাংলাদেশে সকল রোগ নিরাময়ে দেশের চিকিৎসা
বিজ্ঞানকে আরও এগিয়ে নিতে সরকারের প্রচেষ্টা
অব্যাহত রয়েছে। দেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
সেক্টরের উন্নয়ন আজ বিশ্বের অনেক দেশের জন্য
মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা
চিকিৎসাসেবার মানোন্নয়নে নিরলস কাজ করে
যাচ্ছেন। চিকিৎসা সেক্টরের উন্নয়নের বিষয়টি আজ
বিদেশীদের মুখেই প্রকাশ পাচ্ছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক মেডিকেল জার্নাল ল্যান্সেটে
প্রকাশিত এক গবেষণার মতে, স্বাস্থ্যসেবাখাতে
বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে ভারত। এতে বলা হয়,
বিশ্বের ১৯৫টি দেশের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা খাতে
ভারতের অবস্থান ১৫৪তম। অথচ বাংলাদেশ ৫২তম
অবস্থানে রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের
আর্থ–সামাজিক উন্নয়নের পরেও স্বাস্থ্যসেবায়
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভারত ব্যর্থ হয়েছে। গত ২৫
বছরে আশানুরূপ স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারেনি
দেশটি। চীন, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের চেয়েও
ভারতের অবস্থান নিচের দিকে।
তবে সার্বিকভাবে দেশের স্বাস্থ্যসেবা এগিয়ে
গেলেও চট্টগ্রামের চিকিৎসাব্যবস্থায় রয়েছে বড়
সংকট। সরকারি হাসপাতালগুলোতে বছরের পর বছর
ধরে চলছে এই সংকট। লোকবল সংকট,
পেশাদারিত্বের অভাব, ডাক্তার ও নার্সের সংকট
এবং জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে না ওঠায়
স্বাস্থ্যসেবায় বিরাজ করছে করুণ–দশা। উপজেলা
স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর কথা বাদ দিলেও চট্টগ্রাম
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কথা লিখতে গেলে
বলা যায়, এখানে আসা রোগীরা চিকিৎসায়
ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
হাসপাতালে চিকিৎসক থাকলেও নেই উপযুক্ত
চিকিৎসা সরঞ্জাম। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে
অ্যাম্বুলেন্স সংকট। দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে
পড়ে রয়েছে চিকিৎসাকাজে ব্যবহূত যন্ত্রপাতি।
ফলে রোগীদের পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ।
আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
মাত্র ৫০০ শয্যার অবকাঠামোতে নির্মিত চট্টগ্রাম
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্তমান শয্যা
সংখ্যা ১ হাজার ৩১৩। প্রশাসনিক আদেশে ৩/৪ বছর
আগে এই শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হলেও বাড়েনি
জনবল। অধিকন্তু ১ হাজার ৩১৩ শয্যার বিপরীতে
প্রতিনিয়ত প্রায় ৩ হাজার রোগী ভর্তি থাকছে
গরিবের হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত এই
হাসপাতালে। তবে এই তিন হাজার রোগীর সেবা
চলছে সে–ই ৫০০ শয্যার জনবলেই। তাছাড়া ৪২টি
ওয়ার্ড বিশিষ্ট এই হাসপাতালে স্থান সংকটও চরম
পর্যায়ে। শয্যা ছাড়িয়ে মেঝে, বারান্দা, করিডোর
এমনকি সিঁড়িতেও রাখতে হচ্ছে রোগীকে। জনবল ও
স্থানের এমন চরম সংকট নিয়ে এতদঞ্চলের বিশাল
সংখ্যক রোগীর চাপ যেন আর নিতে পারছে না
হাসপাতালটি। সবমিলিয়ে গরিবের এ হাসপাতালটি
বর্তমানে রোগীর ভারে বিপর্যস্ত। এই পরিস্থিতি
হতে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে বিদ্যমান
হাসপাতালের জন্য ১ হাজার শয্যা ধারণ ক্ষমতার
নতুন একটি ভবন নির্মাণের পাশাপাশি নগরে
বিশেষায়িত আরো তিনটি হাসপাতালের প্রস্তাব
করে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তবে কেবল শয্যা সংখ্যা বাড়ালেই চলবে না,
চিকিৎসাসেবাও বাড়াতে হবে। হাসপাতালের
গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম ও জনবল বৃদ্ধি করে
চিকিৎসাসেবায় গতি আনতে হবে। রোগীরা যেন
হয়রানির শিকার না হয়, যেন ন্যায্য চিকিৎসা লাভ
করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা জরুরি।

কোন মন্তব্য নেই: