গত ২৩ নভেম্বর ব্রাহ্মনবাড়িয়া সদর থানার বেতবাড়ীয়া গ্রামের ধানক্ষেতে পাওয়া যায় একটি গলা কাটা অজ্ঞাত লাশ। সংবাদ পেয়ে ছুটে আসে পুলিশ। লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে পাঠিয়ে দেয় হাসপাতাল মর্গে। পরিচয় উদ্ঘাটনের মতো তেমন কিছু পাওয়া যায় না লাশের সাথে। তবে পকেটে পাওয়া যায় দুটি ট্রেনের টিকেট। যাতে লেখা ছিলো হাটহাজারী থেকে চট্টগ্রাম। ছেলেটির পরনের কাপড় এবং মুখে দাড়ি থাকায় ধারণা করা হয় কোন মাদ্রাসার ছাত্র। সে ধারনা থেকেই হাটহাজারী থানাসহ সকল থানায় পাঠানো হয় লাশের ছবি ও বিবরণ। ২৭ নভেম্বর হাটহাজারী মাদ্রাসায় ছেলের খোঁজ নিতে আসেন বৃদ্ধ বাবা আব্দুল মালেক ও কলেজ পড়–য়া বোন। মাদ্রাসায় তার কোন খোঁজ না পেয়ে ছুটে যান হাটহাজারী থানায় জিডি করার উদ্দেশ্যে। থানা থেকে দেখানো হয় একটি লাশের ছবি। ছবি দেখেই সনাক্ত করেন আকবরকে। তারপর চলে আসেন ব্রাহ্মনবাড়িয়া সদর থানায়। তদন্তকারী অফিসার তাদের সাথে কথা বলে জেনে নেন সকল তথ্য। নিহত আকবর হোসেনের মোবাইল নম্বর নিয়ে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা এবং ভিকটিমের পরিবারের দেয়া তথ্যে তদন্তে নতুন মোড় নেয়। খুঁজে পাওয়া যায় জড়িত আসামির তথ্য। এরপর গ্রেফতার হয় ভিকটিমের সহপাঠি ও বন্ধু মাহমুদ। মাহমুদের দেয়া তথ্য মতে তার বন্ধু ও হত্যায় সহযোগিতা করা আসামি ইকবালকেও গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার হয় হত্যায় ব্যবহৃত ছোরা। বিজ্ঞ আদালতে দিয়েছে আসামিরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি।
গ্রেফতারকৃত আসামির দেয়া তথ্যমতে সামান্য টাকা দেনা পাওনা নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে মনোমালিন্য হয়। এরপর মাহমুদ পরিকল্পনা করে আকবরকে খুন করার। এজন্য তার পূর্ব পরিচিত বন্ধু ইকবালকে একটি নতুন ধারালো ছুরি কিনে রাখতে বলে। বন্ধু আকবরকে কৌশলে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে ২০ নভেম্বর নিয়ে আসে ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় বন্ধু ইকবালে বাড়িতে। ২১ নভেম্বর রাতের আঁধারে প্রথমে মাথায় আঘাত ও পরে ছুরি দিয়ে গলা কেটে দুই বন্ধু হত্যা করে আকবরকে। তারপর মাহমুদ চলে যায় হাটহাজারী মাদ্রাসায়। সেখান থেকে বিছানা-পত্র ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে চলে যায় সিরাজগঞ্জে নিজ বাড়িতে। এর মধ্যে আকবরের বোন মোবাইল ফোনে মাহমুদের নিকট ভাইয়ের খোঁজ জানতে চায়। সে তার কোন খোঁজ জানেনা এবং এ বিষয়ে আর কখনও তাকে ফোন করতে নিষেধ করে হুমকিও দেয়। এরপর মাহমুদ মোট ছয়বার মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে।
শুধুমাত্র ট্রেনের টিকেটের সূত্র ধরে ভিকটিমের পরিচয় এবং পরবর্তীতে হত্যা রহস্য হয়েছে উদ্ঘাটন। পুলিশ অফিসারদের মেধা ও দক্ষতায় ক্লু-লেস হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করায় ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ভিকটিমের পরিবারসহ সুধীজন।